১৯৭১ এর ৭ই মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙ্গালী জাতিকে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। তার পর থেকে সদরপুরের মুক্তিকামী জনতার মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে যায় মুক্তিদুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। মার্চ এর উত্তাল দিনগুলোতে এ্যাভোকেট মোশারফ হোসেন (এমপি) কে আহবায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তখন থেকে সদরপুরের যুব সমাজের ছাত্র-জনতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য যে যে ভাবে পেরেছে স্থানীয়ভাবে ট্রেনিং গ্রহণ করেন এবং কিছু ছাত্র-জনতা দলবদ্ধভাবে বা একজন দুইজন করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনিং গ্রহণের জন্য ভারতে গমন করেন। আগষ্টের দিকে আল আমিন ও শহীদ হাফিজের নেতৃত্বে চর বিষ্ণুপুর জামতলায় একটি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থাপিত হয়। তার নেতৃত্বে ছিলেন এ্যাভোকেট আব্দুস ছালাম মিয়া (এমপি)। অক্টোবরের প্রথমদিকে ভারত হতে মুজিব বাহিনী উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাঃ এ. গফ্ফার মিয়া সদরপুরের চর মানাইর এর দক্ষিন চরডুবাইল মোঃ বজলুর রশীদ চেয়ারম্যান বাড়ী একটি মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প স্থাপন করেন। তাহার কর্মকান্ডে একাধিক শিক্ষিত যুবকদেরকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। ইতি মধ্যে মোঃ বজলুর রহমান হাওলাদার এবং শহীদ দেলোয়ারের নেতৃত্বে ১০ (দশ) সদস্য বিশিষ্ট সশস্ত্র বাহিনী ডাঃ এ. গফ্ফার মিয়ার সাথে মিলিত হয়ে প্রশিক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকেন। শহীদ দেলোয়ারের নেতৃত্বে সদরপুরের একটি সশস্ত্র গ্রম্নপ শিবচর থানা অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। ভোর রাত হতে পরদিন সন্ধ্যা পর্যমত্ম পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে খন্ড খন্ড গোলা-গুলি হয়। সেই যুদ্ধে উক্ত গ্রম্নপের দেলোয়ার হোসেন এবং মোশারনফ হোসেন শহীদ হন এবং এহত আন আরও ৩ (তিন) জন (রফিক, খলিল এবং ফজলু)। সেই যুদ্ধে পাক-বাহিনীর একাধিক সদস্য নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় অর্জন করে। অক্টোবরে মোঃ হারম্নন-অর-রশিদ এর নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র গ্রম্নপ সদরপুরে প্রবেশ করে এবং মুক্তি যুদ্ধের কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। তাহার নেতৃত্বে নভেম্বর মাসে সদরপুর থানার পাক-হানাদার বাহিনী আত্ম-সমর্পণ করে। অক্টোবরে পস্নাটুন কমান্ডার শাজাহান তালুকদারের সাথে সদরপুরের জালাল উদ্দিন ফকির এবং কবির উদ্দিন ফকিরের নেতৃত্বে সদরপুরে আরও একটি সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা গ্রম্নপ প্রবেশ করে এবং চর মানাইর ইউনিয়নের চর গজারিয়া হাটে একটি মুক্তযুদ্ধ ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। নভেম্বরে লুৎফর কবিরের নেতৃত্বে আরও একটি সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা গ্রম্নপ সদরপুরে প্রবেশ করে চর নাছিরপুর হাটে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকে। ইতোমধ্যে সদরপুরের জামতলায় রাজাকার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের খ- যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে একজন রাজাকার আহত হয় এবং তাহারা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে চর নাছিরপুর ইউনিয়নের কাজী কান্দি গ্রামে রাজা কাজীর বাড়ী পাক বাহিনীর একটি গ্রম্নপ প্রবেশ করে নারী ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। অক্টোবরে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ডাঃ এ. গফ্ফার মিয়া ৪০জন শিক্ষিত যুবকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্রের জন্য ভারতে গমন করে। ভারতে যাওয়ার পথে রাজাকার কর্তৃক আক্রামত্ম হয়ে ডাঃ এ গফ্ফার মিয়া, মোঃ নওফেল মিয়া (অবঃ অতিরিক্ত সচিব) সহ তিন-চারজন আহত হন। সদরপুরের আটরশি গ্রামের আদেল উদ্দিন হাওলাদার এর নেতৃত্বে একটি রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকে। নভেম্বর মাসে সদরপুর থানা পাক-বাহিনী মুক্ত হওয়ার পর সদরপুর থানার সকল মুক্তিযোদ্ধা থানা হেড কোয়ার্টারে অবস্থান করেন। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের মধ্যে দিয়ে সদরপুরের মুক্তিযোদ্ধারা ফাকা গুলি ছুড়ে আনন্দ উলস্নাস করতে থাকেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস